01-10-2019
আশ্বিন মাসে পেঁপে চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়। এ সময়ে রোপণ করা পেঁপের গাছ লম্বা হয় না। এ কারণে ঝড়ে পেঁপে গাছ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই পেঁপে গাছে খুঁটি দেয়ার ব্যবস্থা না করলেও হয়। আশ্বিনে রোপণ করা পেঁপে গাছ পরবর্তী চার মাস শীতের কারণে বৃদ্ধি পায় না। এ সময়ে গাছের পাতাও ঝরে যায়। শীতের শেষে ফাল্গুন মাসের শুরুতে কিছুটা উষ্ণ আবহাওয়ায় সার ও পানি সেচ দিলে ওই সময়ে পেঁপে গাছ ছোট থাকলেও গাছের বয়স বেড়ে যাওয়ায় ছোট গাছেই ফুল আসে এবং ফল ধরে।
পেঁপের চারার বয়স ৩৫ থেকে ৪০ দিন হলেই রোপণ করা যায়। এ সময় চারার উচ্চতা সাধারণত ১৫ সে.মিটারের মত হয়। রোপণের জন্য যে স্থান নির্বাচন করা হয়, সে স্থানটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে। অর্থাত্ কোনোক্রমেই পেঁপের জমিতে যেন পানি জমতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি তৈরির পর রোপণ দূরত্ব অনুযায়ী সারি বরাবর বেড তৈরি করতে হবে। দুই সারির মাঝের স্থান থেকে এমনভাবে মাটি তুলে নিয়ে দু’পাশে রাখতে হবে যাতে দু’সারির মাঝে একটি নালা তৈরি করা যায় এবং বেডগুলো দু’দিকে নালা বরাবর ঢালু হয়। বেড ঢালু করার কারণ হল কোনোক্রমেই যেন পানি বেডের উপর না জমে, দু’দিকের নালায় গড়িয়ে যায়।
২.০ থেকে ২.৫ মিটার পর পর সারি করে সারিতে একই দূরত্বে ৪৫ থেকে ৬০ সে.মি. চওড়া ও ৪৫ থেকে ৬০ সে.মি. গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হয়। গর্তের মাটি ঝুরঝুরে করে মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে দিতে হয়। চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ দিন আগে রাসায়নিক সার মেশাতে হয়। প্রতি গর্তে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২৫ গ্রাম বোরিক এসিড এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট একসাথে ভালভাবে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। পেঁপের চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা গজানোর সাথে সাথে প্রতি গাছে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর শীতের শেষে ফাল্গুনের শুরুতে প্রতি পেঁপে গাছে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফল ধরার পর গাছপ্রতি এ মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে।
প্রতি গর্তে ২০ থেকে ২৫ সে.মি দূরত্বে দু’টি চারা রোপণ করা যেতে পারে। তবে একটি চারাও রোপণ করা যায়। পেঁপের চারা রোপণের ২ থেকে ৩ দিন আগে গর্তটি জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। গাছে ফুল আসার পর পুরুষ গাছ বা স্ত্রী গাছ বুঝা যায় এবং তখন ক্ষেতে শতকরা ৫টি পুরুষ গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হয়। এক সাথে দু’টি গাছ রাখা ঠিক নয়।
চারা রোপণের আগে পলিব্যাগ থেকে চারা বের করার সময় একটি ব্লেড দিয়ে পলিব্যাগের একদিক চিরে দিতে হবে। এরপর চারার মাটির বলটি যেন ভেঙে না যায় বা চারার শিকড়ের কোনোরকম ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে চারাটি গর্তের ভরাট করা মাটিতে হাত দিয়ে চারার মাটির বলের আকারের চেয়ে একটু বড় গর্ত করে সে গর্তে স্থাপন করতে হবে। চারার গোড়া পলিব্যাগে যতটুকু বাইরে ছিল ঠিক ততটুকুই বাইরে বা উপরে রেখে রোপণ করতে হবে। কখনোই চারার গোড়া বেশি গভীরে পুতে দেয়া বা চারার গোড়ায় অতিরিক্ত মাটি দেয়া উচিত নয়। এতে চারা গোড়াপচা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ সময়ে চারার গোড়ায় প্রথম ১ থেকে ২ দিন কোনো পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে পাতার ওপরে হালকা করে হাত দিয়ে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।
পেঁপের বাগানে পেঁপে গাছের গোড়া সব সময় পরিষ্কার রাখা দরকার। শীতের সময়টুকুতে পেঁপে বাগানে সাথী ফসল হিসেবে লাল শাক, পালং শাক, ধনে শাক, লেটুস, বেগুন, মরিচ চাষ করা যেতে পারে। তবে টমেটো, বেগুন ও কপি জাতীয় সবজি চাষ না করাই ভাল। কারণ এসব সবজিতে জাব পোকার আক্রমণ বেশি হয় বলে পেঁপে গাছও জাব পোকার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
শীতের আগে রোপণ করা পেঁপে গাছে সাধারণত ৪ থেকে ৫ মাসে ফুল ধরে এবং ৬ থেকে ৭ মাসে কাঁচা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। প্রথম দিকে গাছে প্রচুর পেঁপে ধরে। এগুলোর মধ্য থেকে কিছু কিছু পেঁপে ফল ছাঁটাই করতে হবে অর্থাত্ ফল সংগ্রহ করে পাতলা করতে হবে। তাহলে অন্য পেঁপেগুলো যখন পরিপক্ব হয়, তখন বড় আকারের হয়। আর রোপণের ১০ থেকে ১১ মাস পর পরিপক্ব পেঁপে ফল সংগ্রহ করা যায়।
0 Comment